বিয়ে নিয়া যতো ভাবনা চিন্তা । (ইয়ে মানে,আমার জন্য না,আশপাশের মানুষগুলার জন্যই সব চিন্তা ।) :p
লিখেছেন লিখেছেন নান্দিনী ০৯ জুন, ২০১৬, ০৯:৪৩:৪০ রাত
"লিলাবালি লিলাবালি
বরজবতি সইগো,
কিদিয়া সাজাইমু তরে".
.
এমনই রয়েছে আরো কতো গান,গীত,,যা একটা সময় বিয়ে বাড়িতে বাজানো হতো, শুনা যেতো,এখনো গান শুনা যায় বিয়ে বাড়িতে,তবে এইসব বাংলা গান না, এখন শুনা যায়,
"চিটিয়া কালালইয়া রে" অথবা "চুম্মে কি রাত হে,চুম্মে কি বাত হে"-এই টাইপের হিন্দি গান!
.
বিয়ের অনুষ্ঠান এখন উদযাপিত হয় অনেকটাই ভিন্ন আঙ্গিকে,ভিন্ন মাত্রায়,ভিন্ন
কালচারে,ভিন্নভাবে।এতো ভিন্নতার মাঝে
আমাদের মূল ট্র্যাডিশনের অভিন্ন থাকার
সুযোগ কোথায়?
এতে আমাদের নেই কোনো দুঃখ,পরিতাপ,নেই কোনো মনবেদনা, যদিও এই আমরাই কখনো,সখনো লম্ফ ঝম্ফ করি,আর চিত্কার করে বলি "গেলো গেলো চেতনা"
আমাদের চেতনা যে আসলে কিসে,সেটাই আমাদের বোধগম্য হয় না।
*******
বিয়ে বাড়িতে নাচ,গান,বাদ্য হয়েছে,হচ্ছে,। হোম ডেকোরেশন থেকে শুরু করে মানুষ ডেকোরেশন সবই হচ্ছে। দিনকে দিন এসবের মাত্রা বেড়েই চলছে। মধ্যবিত্ত,নিম্নমধ্যবিত্ত ফ্যামিলিতে যখন
বিয়ের বাজেট করা হয়,তখন নাভিশ্বাস ওঠে,উচ্চবিত্তদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কিছুই না।
কিন্তু বর্তমানে যেভাবে বিয়ের অনুষ্ঠানাদি
হচ্ছে,তা একপ্রকার ট্রাডিশনে রুপ নিচ্ছে,ফলশ্রুতিতে এর চাপ পরছে মধ্যবিত্ত,নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে,কারন এগুলো করাই যখন ট্রাডিশন,তখন না করলে যে আর সমাজে টিকে থাকাই দায় হয়ে যাবে,লোক
মুখে তখন শুনতে হবে--
"জীবনে তো একবারই বিয়ে হচ্ছে,একটু
অনুষ্ঠানাদি,ফুর্তি ফার্তি না করলে কি আর হয়" (বিয়ে যে জীবনে একবারই হবে,এইটার গ্যারান্টি কি?আর ফুর্তি ফার্তির ধরনটাই বা এমন কেনো?)
.
অন্য পক্ষের লোকজন বলবে "এরা তো
সাংঘাতিক কৃপণ,বিয়েতে সামান্য খরচ করতে চাচ্ছে না"
.
আমি বলি,ভাই এবার থামেন,অনেক তো "ফুর্তি ফার্তি,খরচ পাতি" করলেন,,লাভের লাভ হইলো টা কি?বিয়েটা কি শুধুই ফুর্তি করা ?ডিজে পার্টির মতো ড্যান্স করা ? ছেলে-মেয়ের ম্যাচিং ড্রেসাপে সীমাবদ্ধ? বিভিন্ন ঢং আর রং এ ক্যামেরার সামনে এসে পোজ দেওয়া?ক্যামেরাম্যান আবার কিছুক্ষন পর পর বলবে--
"আপু/ভাইয়া একটু ওইদিকে কাত হন,এই দিকে বেকে বসেন,এমনে বাকা করে তাকান" ।
কনেকে আবার সেজে গুজে বসে থাকতে হবে স্টেজে,শোডাউন চলতে থাকবে আনলিমিটেড।
*******
এসবই কি লোক দেখানো নয় ?বিয়ের মতো এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার,তাতে কেনো এতো আতিশয্য ? সব কিছুরই তো একটা সীমা পরিসীমা আছে,তাই না?
.
অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে চিন্তা করলে এখন বিয়ে করার চাইতে,প্রেম বা বিয়ে বহিঃর্বুত সম্পর্ক করাই অনেক সহজ।সস্তা প্রেমে তাই গা ভাসাচ্ছে জাতির কর্ণধার ।
সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছে পরিবার।
বিয়ের মতো এমন পবিত্র একটা সম্পর্ক
স্থাপনের অনুষ্ঠান কি পবিত্রভাবে উদযাপন করা যায় না?যে দুজন মানুষ তাদের নতুন দাম্পত্যজীবন শুরু করতে যাচ্ছেন,তাদের সামনের দিনগুলা যেনো পবিত্রতায় পূর্ণ থাকতে পারে সেজন্য কি আমরা কিছু করতে পারিনা?কি দরকার
মিছেমিছি আনন্দ-অনুষ্ঠান উদযাপনের নামে এতোসব আতিশয্য করার ? আড়ম্বরপূর্ণভাবেও তো করা যায়।
অনুষ্ঠানাদি করার নামে অনেক পরিবারকেই নিঃস্ব হতে হয়,কখনো
টানতে হয় ঋণেরবোঝা।অনেককে দেখি লোন নিয়ে করছেন,কেউ আবার বিভিন্ন NGO থেকে ক্ষদ্র ঋণ নিচ্ছেন।
বর্তমানে বিয়ে অনুষ্ঠানের যে ট্রাডিশান,তাতো এই আমাদেরই সৃষ্টি,আমরাই তো আবার ইচ্ছে করলেই পারি তা পরিবর্তন করে দিতে।ঘনিষ্ঠ নিকটাত্মীয় স্বজনদের নিয়ে ছোটো পরিসরে,সাধারণভাবেও তো করা যায়,ধর্মিয় দৃষ্টিকোন বাদ দিলেও,সাধারণ লজিক থেকেও তো এটা বুঝা যায়,যার শুরুটা হয় অপব্যয় আর আতিশয্য দিয়ে,তার পরের অধ্যায়টা কেমন হবে? বিয়ের দিন চারেক পর তো যে যার স্থানেই চলে যাবে, নতুন দম্পতিকে তখন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে।
আমাদের মতো নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের
দেশে,এতো আতিশয্য মানায় না।
******
এতো যে ব্যয় করা হয়,বিয়ের সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ কাজটাই থাকে বেশিরভাগ সময় অপূর্ণ ।বলছি মোহরানার কথা,এটা শুধু তালাক এর সময়ই ওঠে,অথচ এটা বিয়ের সময়ই পরিশোধ করার ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হয়েছে।
আর অবশ্যই মোহর হতে হবে ছেলের সামর্থ অনুযায়ি।কিন্তু এটা নিয়াও চলে কোরবানির হাটের মতো দরাদরি,এটা খুবই বাজে।ছেলের সামর্থ যত,ততই নগদে পরিশোধযোগ্য করা উচিত মোহর ।
*******
ধর্মিয় দৃষ্টিকোন থেকে যদি আমরা দেখি,তবে সেখানে বলা হচ্ছে,যত সাধারণ আর সিম্পল ভাবে বিয়ের অনুষ্ঠানাদি শেষ হবে,ততই ভালো। আল্লাহর খাস রহমত থাকবে সেই দম্পতির ওপর,যাদের বিয়েতে অপব্যয় অপচয় হয়নি, কারন অপচয়কারিকে আল্লাহ পছন্দ করেন না।
নিকৃষ্ঠতম হালাল বা জায়েজ কাজ হচ্ছে তালাক,এটা হালাল হলেও আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এটা খুবই অপছন্দ করেন,আর শয়তানের কাজই হলো,নতুন দম্পতিকে এই খারাপ কাজের দিকে উত্সাহিত করা। ইবলিস তো চ্যালেঞ্জ করেই আসছে আল্লাহর সাথে,যে সে আমাদের ডান দিক থেকে,বাম দিক থেক,সামনে থেকে পিছন থেক সব দিক থেকেই আক্রমণ করবে,আমাদের জাহান্নামি করার জন্য
সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে।এখন আমাদের কি উচিত নয় নব দম্পতির জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করা? আর নবদম্পতির ও এটাই চাওয়া। মেয়ে পক্ষের ওপর এখন যে এতো খরচের বোঝা,এটাও তো ইসলাম সমর্থিত না।
******
যাদের এখনো বিয়ে হয়নি,তাদের কি উচিত নয়,এজন্য মহান রবের দরবারে দুই হাত তুলে চাওয়া? যে ব্যক্তির সাথে এই দুনিয়ার দাম্পত্ত জীবন লিখা আছে,সে যেনো একজন খাটি ইমানদার ব্যক্তি হয়,একজন ভালোমনের আর চিন্তার মানুষ হয়।তাকে দেখলেই যেনো মনে প্রশান্তি বয়ে যায়,সে যেনো হয় দুনিয়া এবং আখিরাতের সাথী,অবশ্যই জান্নাতের সাথি।
******
আল্লাহ আমাদের মাফ করুন । বিয়ে খুবই খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ,এজন্য একে বলা হয়েছে অর্ধেক দ্বীন,বিয়ে করার মাধ্যমে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ হয়,আর বাকি অর্ধেক পূর্ণ করতে প্রয়োজন স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের সহযোগীতা। আমরা তো কথায় কথায় বলি--"সব ভালো তার,শেষ ভালো যার"
আবার আমরাই বলি--"যার শুরুতে হয়না,তার শেষেও হবে না"
দুটো কথাই পরস্পর সাংঘর্ষিক,কিন্তু সে যাই হোক,শুরুটা যদি পবিত্রভাবে করা যায়,ইনশাল্লাহ তার পরবর্তি সময়কালও পবিত্রভাবেই অতিবাহীত হবে।ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা চিন্তা করে হলেও বাজে কাজ বর্জন করা উচিত।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ
এরকম লাক্সারী করা থেকে যদি মহিলারা বের হয়ে আসতে পারে তাহলে বিয়ে নিয়ে অহেতুক , অপ্রয়োনজীয় খরচ এমনিতেই কমে যাবে ।
দেনমোহর কত হবে সেটা ছেলেকেই নির্ধারন করতে দেওয়া উচিত ।
০ বরজবতি - এর মানে কি ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন